ঢাকা, রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ আপডেট : ৭ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ফরিদপুরে নিম্ন-আয়ের মানুষ বিপাকে

  ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৪, ১৫:৫৭

ফরিদপুরে নিম্ন-আয়ের মানুষ বিপাকে
ফরিদপুর শহরে অটোরিকশা। ছবি: প্রতিনিধি

চলমান পরিস্থিতিতে ধারাবাহিক কারফিউতে স্থবির হয়ে পড়েছে ফরিদপুরের দিনমজুর ও সাধারণ খেটে-খাওয়াদের জীবন। কারফিউ থাকার কারণে ঘর থেকে বের হতে না পারায় অনেকের চুলায় আগুন জ্বলছে না। কারফিউ শিথিল হলে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘর থেকে বের হলেও কোনো কর্ম মিলছে না। ফলে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে।

তবে, এসব বিবেচনায় রেখে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন কারফিউ'র শিথিলের সময় বৃদ্ধি করেছেন। শুক্রবার ১১ ঘণ্টা শিথিল থাকা কারফিউ শনিবার বৃদ্ধি করে ১৪ ঘণ্টা করা হয়েছে। এতে মানুষ তাদের নিত্যদিনের কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারছেন বলে দাবি জেলা প্রশাসনের।

এদিকে, প্রতিদিন ফেরি করে চলাদের আয় রোজগার অনেকটা বন্ধ। তাই বাধ্য হয়েই অনেকেই কারফিউয়ের সময়েও বেঁচে থাকার তাগিদে বের হতে দেখা গেছে। যারা দিন আনে দিন খায় তারাও বেশি সমস্যায় পড়েছেন। বিশেষ করে দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালাসহ নিত্য পেশার মানুষ একেবারেই নিরুপায়।

ভালো নেই ষাটোর্ধ ফরিদপুর শহরের রিকশাচালক জব্বার মোল্যা। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে ৫০০-৭০০ টাকা আয় করতেন তিনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে চলমান কারফিউয়ের সময় একটুআধটু রিকশা চালিয়ে ১০০-২০০ টাকা আয় করছেন। রাস্তায় যাত্রী কম, তাই আয়ও কম। জমা টাকাও শেষের দিকে। তাই পাঁচ সদস্যের সংসার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

জব্বার মোল্যা বলেন, ‘হামাগো তো কেউ খাওন দেয় না, আমাদের এ রিকশার প্যাডেল মেরে পেট চালাতে হয়। দু'মুঠো খেয়ে বাঁচতে চাই।'

ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট নৌবন্দর। সেখানে কয়েক শত কুলি কাজ করেন। জাহাজ থেকে পণ্য লোড-আনলোড, সিমেন্টসহ নানা জিনিসপত্রের বস্তা টানাসহ লোড-আনলোডের কাজে নিয়োজিত থাকেন তারা। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এ নদীবন্দর মুখরিত থাকে কুলি ও শ্রমিকদের হাক-ডাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঠিক তার উলটো চিত্র। ট্রাকের কোনো দীর্ঘ সারি নেই, নেই তেমন কোনো কোলাহল। বেশিরভাগ গুদাম ও আড়তগুলোতে ঝুলছে তালা। কিছু শ্রমিককে দেখা গেছে অলস সময় পার করছেন। তাদেরই একজন শুকুর আলী। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে কারফিউর প্রভাবে তার পরিবারের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তাদের জাহাজ থেকে লোড-আনলোডের কাজ বন্ধ থাকায় অর্থকষ্টে বিপাকে রয়েছেন।

জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ফরিদপুরের হোটেল-রেস্তোরাঁর শ্রমিক, গৃহকর্মী ও হকারসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। ভ্রাম্যমাণ চা-বিস্কুট বিক্রেতা, ফল বিক্রেতা, ভাসমান শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা কারফিউ'র সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজের সন্ধানে বের হলেও তেমন কাজ পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে, এসব পরিস্থিতি ছাপিয়ে ও আতঙ্ক কাটিয়ে শিগগিরই সব স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আশা এসব নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, 'এসব বিবেচনায় আজ শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে ফরিদপুর জেলায় কারফিউ শিথিল করা হয়। এই শিথিলতা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। এই শিথিলে ধীরে ধীরে জনদুর্ভোগ কমে আসবে।'

জেলা প্রশাসক জানান, ফরিদপুর জেলায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কারফিউ নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ ও বিজিবি। এছাড়া মাঝেমধ্যে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছেন। তবে, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকায় ফরিদপুরে সেনাবাহিনীর কোনো স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়নি। ধীরে ধীরে জনজীবনে পুরোপুরি স্বস্তি ফিরে আসলে এ কারফিউ তুলে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এ জেলা প্রশাসক।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত