ঢাকা, রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ আপডেট : ৭ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

বাসে আগুন দিতে ৪ লাখ টাকায় চুক্তি, শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৯:৫৫  
আপডেট :
 ২৪ জুলাই ২০২৪, ২০:০৩

বাসে আগুন দিতে ৪ লাখ টাকায় চুক্তি, শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার
দিদারুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে মহানগর শ্রমিক লীগ নেতা বায়েজীদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল আলমের নির্দেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চারটি বাসে আগুন দেন লেগুনাচালক সোহেল রানা (৩২)।

এ জন্য তাকে চার লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল। তবে অগ্রিম হিসেবে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৫০০ টাকা। ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে লেগুনাচালক সোহেলকে গত সোমবার সকালে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিদারুলকে গ্রেপ্তার করা হয় পরেরদিন (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায়।

এর আগে বিকেলে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন মোহাম্মদ জুনায়েদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সোহেল। বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রহমত উল্লাহ আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, আসামি সোহেল রানা দিদারুলের নির্দেশে টাকার বিনিময়ে বিআরটিসি বাসে আগুন দেয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে।

এদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে খুনের মামলাও রয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর নতুন পাড়া এলাকায় আবদুল হালিম ওরফে রুবেল নামের একজনকে ছুরিকাঘাতে খুন করার অভিযোগ মামলা রয়েছে। এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়, বিআরটিসি বাসে সুপারভাইজার দেয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে রুবেলকে খুন করা হয়।

চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের উপস্থিতিতে সোহেল রানা বলেন, চার লাখ টাকা দেয়ার কথা বলায় দিদারুলের নির্দেশে বাসে আগুন দিয়েছি। তবে সোহেলকে নির্দেশ দেয়ার কথা অস্বীকার করেন নগরের বায়েজীদ বোস্তামী থানার শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল আলম। তিনি আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, এসব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরের অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় বিআরটিসি ডিপো অবস্থিত। সেখানে ৯৬টি সরকারি বাস রয়েছে। গত শনিবার রাত ১২টার দিকে ডিপোর ক্লিনিং শেডের পাশে থাকা চারটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে একটি বাসের ১৬টি আসন এবং আরেকটির আটটি পুড়ে যায়। বাকি দুটির আংশিক পুড়ে যায়। এ ঘটনায় বিআরটিসি ডিপো চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় রোববার মামলা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ডিপোর সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, কালো শার্ট ও লুঙ্গি পরা এক যুবক আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পরিচয় শনাক্ত করে সোমবার নগরের বায়েজীদ বোস্তামী এলাকা থেকে এই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাসা থেকে কালো শার্ট ও লুঙ্গিও আলামত হিসেবে জব্দ করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল স্বীকার করেন, ঘটনার আগে শুক্রবার বিকেলে নতুনপাড়া সিএনজি স্টেশন এলাকায় দিদারুল আলম তাকে ৫০০ টাকা দেন ডিপোর ভেতর বাসগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিতে। কাজ শেষে আরও চার লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল।

তিনি আরও বলেন, সোহেলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিদারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দিদারুল ও সোহেলকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়। দিদারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। সোহেল পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয় বলেও জানান ওসি আনোয়ার হোসেন।

বিআরটিসি বাসে আগুন দেয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিআরটিসি ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার জানান, সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে দিদারুল ডিপোর বাসগুলোতে সুপারভাইজার দেওয়াসহ নানা প্রভাব বিস্তার করতেন। তিনি এখন আর সুবিধা করতে না পারায় এ ঘটনা ঘটাতে পারেন।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি বখতিয়ার উদ্দিন দাবি করেন, দিদারুলের বিরুদ্ধে এটা ষড়যন্ত্র হতে পারে। তার বিরুদ্ধে যেহেতু মামলা হয়েছে। আইনগতভাবে যা হওয়ার হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত