ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১৪ ভাদ্র ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফেলে দেয়ার ভিডিও ভাইরাল

  নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৫:০৩  
আপডেট :
 ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৫:১১

ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফেলে দেয়ার ভিডিও ভাইরাল
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মুরাদপুরের কোটাবিরোধী আন্দোলনকালীদের সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ চলাকালে একটি ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফেলে দেয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ছাদ থেকে মাটিতে পরার পরও তাদের পেটানো হয়। তার আগে ছাদে আটকে পড়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। গুরুতর আহত এক ছাত্রলীগ কর্মী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওই হামলার বিবরণ দিয়েছেন।

বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে মুরাদপুরের ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি ঘিরে শুরু হয় সংঘর্ষ। ষোলশহর, দুই নম্বর গেট এলাকা হয়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে মুরাদপুর মোড় পর্যন্ত। এক পর্যায়ে ধাওয়া খেয়ে নগরীর মুরাদপুরে বেলাল মসজিদের পাশে ওই পাঁচতলা ভবনে আশ্রয় নিতে গিয়ে আটকা পড়েন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা ভবনটি ঘিরে ফেলে। তারপর ওই ভবনের ছাদে আটকে মারধর করা হয় ছাত্রলীগ কর্মীদের।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনের ছাদে আটকে পড়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তাক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাদে পড়ে আছেন।

ফেইসবুকে আসা তৃতীয় একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কোটাবিরোধী অন্দোলনকারীদের হামলার মুখে ছাদ থেকে ওই ভবনের পিছনের অংশের কার্নিশ ও পানির পাইপ বেয়ে ১৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নেমে আসার চেষ্টা করছেন।

তাদের মধ্যে কয়েকজন সানশেডে ও জানালার মাঝের অংশে আশ্রয় নেন। তখনও উপরে থাকা আন্দোলনকারীরা পাথর ছুড়ে এবং লাঠি-হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে তাদের নিচে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। নিচ থেকেও তাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হচ্ছিল।

এক পর্যায়ে ভবনটির ডানপাশের পাঁচ তলার সানশেড থেকে কালো পোশাক পরিহিত একজন নিচে পড়ে যান। মাটিতে পড়ে তার শরীর লাফিয়ে উঠে। তারপর নিথর পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরেকজন উপর থেকে মাটিতে পড়ে যান।

হামলায় ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা জালাল উদ্দিন জুবায়ের। তার হাতের রগ কেটে দেয়া হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে পা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুবায়ের সেই হামলার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি উপরে উঠছি। ছাদে ছিলাম। এরমধ্যে ওরা দরজা-টরজা লাথি দিচ্ছে। আমি রিকোয়েস্ট করতেছি, ভাই আপনারা চলে যান। ওরা বলতেছে যে, কালকে আমাদের বোনকে মারছস না? আজকে তোকে একদম জানে মেরে ফেলব। এরপরে আমার হাতে একটা কোপ দেয়। বাম হাতের কবজিতে একটা কোপ দেয়। কোপ দেওয়ার পরে আমি ওদের এক সাইড থেকে অন্য সাইডে যখন যাচ্ছি, পিছন থেকে একজন এসে আমাকে লাথি দেয়। লাথি দেয়ার পরে আমি পরে যাই।

পরে ফায়ার সার্ভিস ও রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে দুটি রিকশা ভ্যানে করে আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

নুরুল আজিম রনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলের আইসিইউতে ৫ জন এবং দুটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে আরো তিনজন গুরুতর অবস্থায় আছেন।

তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে কোটাবিরোধী আন্দোলনের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. সৈয়দ হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ পরস্পরকে চিনতে না পেরে নিজেরা নিজেদের মেরেছে। আমরা সাধারণ অন্দোলনকারী। আমাদের হাতে কোনো কিছু ছিল না।

আজ বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে মুরাদপুর এলাকা পরিদর্শন শেষে নগর পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি মুরাদপুরের ঘটনাস্থলে গিয়েছি। যেখানে তিনজন গতকাল নিহত হয়েছেন সেখানে গিয়ে দেখেছি।

ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফেলে দেয়ার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান পুলিশের কমিশনার।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত