ঢাকা, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১ আপডেট : ৭ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

শেরপুরে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন

  শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১০:১৮

শেরপুরে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন
শেরপুরে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। ছবি: প্রতিনিধি

পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে আসায় মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এদিকে পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি মিললেও বন্যায় কাঁচা সড়ক, বীজতলা, সবজি ক্ষেত ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন। অন্যদিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও মৃগী নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে শেরপুর সদরের বেশ কয়েকটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

গত মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টির ফলে শেরপুরের ৩টি নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ওইসব এলাকায় পানি কমে আসায় ভেসে উঠতে শুরু করেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। ৪টি উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার পরিবার।

সদর উপজেলার কামারের চর ও বাগলদী গ্রামের হোসেন আলী, রহমত শেখ ও ইমরান গাজী বলেন, দুইটি উপজেলার বিভিন্নস্থানে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে শতাধিক মাছের ঘের, বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক। এখনো পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার পরিবার। ৬০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমনের বীজতলা, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও গাছপালা।

ঝিনাইগাতী সদরের ব্যবসায়ী হাসমত আলী ও আফসার আলী বলেন, ঝিনাইগাতীতে প্রবল ঢলের স্রোতে মহারশী, সোমেশ্বরী নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতী বাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। একইসঙ্গে উপজেলার রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, ধানশাইল, কাংশা, ঝিনাইগাতী, চতল ও বনগাঁওসহ অন্তত ৩০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করে। ঝিনাইগাতীর ধানশাইল ইউনিয়নের কান্দুলীনামা পাড়া গ্রামের বিধবা হালিমা বেগম বলেন, আমগোর নৌকা নাই। পানি আওনের পর থাইকা কোনো বাড়িতে যাইতে পারিনা। কেউ আইতেও পারে না। পানি ঘরে আইছে, রান্ধিমু কই? চার দিন থাইক্যা কোনো মতে মুড়ি-চিড়া খাইয়া বাইচ্যা আছি।

তিনি আরও বলেন, ঘরে অন্তঃস্বত্বা মেয়ে, বৃদ্ধা শাশুড়ি আর ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি।

ভোগান্তিতে পড়া ঝিনাইগাতী সদরের বাসিন্দা কুদ্দুস মিয়া বলেন, বন্যা হলে আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়ি, ঘরবাড়ি ভেসে যায়। প্রতি বছর এভাবে আমাদের ক্ষতি হয়, তবুও বাঁধ হয় না। নেতারা মুখে বলে, কিন্তু কাজ করে না।

নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে প্রবল বেগে পাহাড়ি ঢল নামে। উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের সন্নাসীভিটা নয়াপাড়া এলাকায় ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। পৌর শহরের গড়কান্দা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। খালভাঙ্গা এলাকায় অন্তত তিনশ মিটার বাঁধ উপচে আশপাশের এলাকায় ঢলের পানি প্রবেশ করে। মঙ্গলবার সকালে গোল্লারপাড় এলাকায় শেরপুর-নালিতাবাড়ী সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়, ফলে ব্যাহত হয় যানচলাচল। পরে বিকেলে পানি নেমে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে নদীগুলোর ভেঙে যাওয়া বাঁধ জরুরি মেরামতের জন্য কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন, ঝিনাইগাতী উপজেলায় ২০ হেক্টর রোপা আমনের বীজ তলা, ১৫ হেক্টর আউশ এবং ৯৮ হেক্টর সবজি খেত আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা, ১৩৫ হেক্টর আউশ ও ১২৬ হেক্টর সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৫ হেক্টর রোপা আমন বীজলা আংশিকভাবে এবং ২০ হেক্টর রোপাআমন বীজতলা সম্পূর্ণভাবে পানিতে ঢুবে গেছে। তবে পানি স্থায়ী না থাকায়, বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, পাহাড়ি ঢলে যে সব রাস্তাঘাট, বাঁধ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেগুলো সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার যে বাধগুলোর ক্ষতি হয়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। আর পানি উজান থেকে নামতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত