বিনা বেতনে ট্রাফিকের কাজ করে কুড়িয়েছেন প্রশংসা
স্থায়ী কর্মসংস্থান চান হিজড়া শিফা
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ১৬:০৮ আপডেট : ২৫ জুন ২০২৪, ১৬:২৪
পরনে লাল শাড়ি, হাতে লাঠি ও মুখে বাঁশি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) এক সদস্য। তার পোশাক দেখেই বোঝা যায় তিনি সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নন। সপ্তাহে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্বঃপ্রণোদিত হয়ে যানজট নিরসনে তিনি কাজ করছেন।
তার এ উদ্যোগ পথচারী, যানবাহনের চালকসহ সর্বসাধারণের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে পেট ভরে খাবারের জন্য একটি নির্দিষ্ট বেতনের কর্ম খুঁজছেন তৃতীয় লিঙ্গের এ সদস্য। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বিধবা মায়ের মুখে অন্ন জোগাতে এখন স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ চান তিনি।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, সাধারণ মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে টাকা তুলে তুলেই জীবন চালায় বেশিরভাগ হিজড়া। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই কাজ করে স্বাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা শিফা মিজি। ২০০৬ সালে ব্লাড ক্যান্সারে বাবা আমির হোসেনের মৃত্যুর পর কাজ করেছেন বাসা-বাড়িতে। ২০১২ সালে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় একটি ইন্ডাষ্ট্রিজে ১ হাজার ৮’শ টাকা বেতনে চাকরি নেন। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে চাকরী হারান তৃতীয় লিঙ্গের এ সদস্য।
সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ থেকে এক বছর ধরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের দালালবাজারে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার নিরলস দায়িত্ব পালনে খুশি চালক, পথচারী ও সাধারণ মানুষ।
যানবাহন চালকরা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরের উপশহর দালালবাজারের এ পথে ঢাকা, চট্রগ্রাম,চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। আগে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটত এই বাজারে। বেশ কিছু দিন থেকে তৃতীয় লিঙ্গের শিফা নিজ উদ্যাগে যানবাহন পারাপার করে দিচ্ছেন। তার এ উদ্যোগের ফলে তারা দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।
শিফা মিজি জানান, সংসারে বিধবা মা কাজল রেখা প্রকাশ জাহানারা ও দুই ভাই রয়েছে। নেই নিজেদের ঘর-বাড়ি। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করার সুবাধে ওই বাড়িতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসবাস করছেন। মা, ছোট ভাইদের মুখে অন্ন তুলে দিতে দালালবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে আলাপ করে যানজট নিরসনে কাজ শুরু করেন। এক সময় এ বাজারে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকতো। তিনি যানজট নিরসনে কাজ করেন বলে অনেক চালক স্বেচ্ছায় তাকে ৫/১০ টাকা করে দেন। আবার স্থানীয় ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিরা খুশি হয়ে ৫০০/১০০০ টাকা দেন। সে টাকাতেই তার জীবন চলে। এখন একটি স্থায়ী চাকরী চান তৃতীয় লিঙ্গের এ সদস্য।
এদিকে সরকারিভাবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণ চলছে শিফাদের। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিফা মিজি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং বাজার কমিটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, শিফা নিজ উদ্যোগেই এতদিন ধরে বাজারে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ বিনিময়ে তিনি কিছুই পান না। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিনি এ কাজ করেই যাচ্ছেন। সবাই মিলে আর্থিকভাবে সহায়তা করলে তার উপকার হবে। তবে সরকারিভাবে স্থায়ী কর্মসংস্থানের দাবি জানান তারা।
লক্ষ্মীপুর ট্রাফিক পুলিশ ইনচার্জ প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে তৃতীয় লিঙ্গের শিফা নিজ উদ্যোগে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন। বিনিময়ে সে ট্রাফিক বিভাগ বা পুলিশের কাছে কিছু দাবি করেনি। সে মানব সেবা করার জন্য কাজটি করছে। তার মতো অন্য হিজড়ারা যদি কর্মে ফিরে আসে তাহলে মানুষও তাদের ভাল চোখে দেখবে। তার ভাল কাজে খুশি হয়ে স্থানীয় প্রশাসন একটি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। তার উদ্যোগটা নিঃসন্দেহে ভাল কাজ বলে মনে করছেন ট্রাফিক বিভাগের এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ