জয়পুরহাটে ১৭১ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক
সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য ১২৮টি
সাগর কুমার, জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৪০ আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৪৯
জয়পুরহাটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এই জেলার ১৭১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে ১২৮টি। শিক্ষক সংকটের কারণে অতিক্তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে চলতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। বাড়তি চাপের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা। তাই অবিলম্বে এসব শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, উত্তরের ভারত সীমান্তবর্তী জয়পুরহাট জেলা। জেলাটি ছোট হলেও এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৭১টি। ৩৭১টির মধ্যে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ২০০টি স্কুলে। আর শূন্য পদ রয়েছে ১৭১টিতে। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৪৪টি, পাঁচবিবি উপজেলায় ৪৫টি, কালাই উপজেলায় ২৪টি, আক্কেলপুর উপজেলায় ৩৮টি ও ক্ষেতলাল উপজেলায় ২০টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। এছাড়া ১২৮টি সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে এ জেলায়। জেলায় সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫৯ হাজার ৪৩৫ জন।
এসব স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকার কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। এ ছাড়া তাদের অতিরিক্ত পাঠদানের পাশাপাশি ও দাপ্তরিক কাজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। দাপ্তরিক কাজ ছাড়াও শিক্ষা অফিসে বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের কাজে যেতে হচ্ছে। আবার পাঠদানও করাতে হচ্ছে। একদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে পাঠদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
জয়পুরহাট পৌর এলাকার পাঁচুরচক শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক টুলু আক্তার বানু বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ৭ জন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৭২ জন। দাপ্তরিক কাজে প্রায়ই আমাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে অনেক সময় ব্যাহত হয় শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার শিশু শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিনুর বেগম বলেন, আমার স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ ৬টি পদ রয়েছে। তবে বিদ্যালয়ে কমর্রত আছেন ৪ জন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক না থাকায় উপবৃত্তির কাজসহ সব কাজই আমাকে করতে হয়।
কালাই উপজেলার বানদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মাকসুদ হেলালী বলেন, এই স্কুলে প্রায় ৬ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। তাই আমাকে দাপ্তরিক সব কাজ করতে হয়। আবার শিক্ষা অফিসে বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের কাজে যেতে হয়। পাঠদানও করাতে হয়।
হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জেরিন আক্তার বলেন, এক স্যার অনেকগুলো ক্লাস নেন, যার কারণে অনেক সময় ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয় না।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিবুল মেশকাত আহমেদ বলেন, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনেক সময় ব্যস্ত থাকায় বেশি ক্লাস নিতে পারেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন মুঠোফোনে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, জেলায় ৩৭১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭১টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এছাড়া ১২৮ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। চলতি দায়িত্ব ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে আপাতত চলছে এসব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান হবে, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি ও নিয়োগের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করা হবে। এছাড়া ডিসেম্বর মাসেই সহকারি শিক্ষক নিয়োগের রেজাল্ট হওয়ার কথা রয়েছে, রেজাল্ট হলেই সহকারী শিক্ষকের পদগুলোও পূরণ হবে। এতে করে আর কোন সমস্যা থাকবে না। নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যক্রমের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি