ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনা টেস্ট নেগেটিভ করে কোটি টাকা প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১৪

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:০৯  
আপডেট :
 ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:২০

করোনা টেস্ট নেগেটিভ করে কোটি টাকা প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১৪
ছবি: নিজস্ব

বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্ট নেগেটিভ ফলাফল পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের ১৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বুধবার রাতে র‌্যাব-১১ এর একাধিক দল প্রথমে কুমিল্লা জেলা কোতয়ালী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. জসিম উদ্দিন (২২) ও মো. সুলতান মিয়াকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও রাজধানী ঢাকার সায়দাবাদ, রমনা ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে (৩) মো. বেলাল হোসেনকে (৩১) গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার বেলালের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে চক্রের সক্রিয় সদস্য মো. আবুল হোসেন (২৪), মো. আবদুল নুর (২১), মো. আলফাজ মিয়া (১৯), মো. শামিম (৩২), মো. আহাম্মদ হোসেনদের (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোবাইল সীমের যোগানদাতা মো. ইমরান উদ্দিন মিলন (১৯), গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে বি-বাড়িয়া জেলায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের অন্যতম হোতা মো. সবুজ মিয়া (২৭), মো. আব্দুর রশি (২৮), আব্দুল করিম চৌধুরী (৩২), মো. আঙ্গুর মিয়া (২৫), এবং মো. আলমগীর হোসেনকে (২০) গ্রেপ্তার করে।

অভিযানের সময় প্রায় সাত লাখ টাকা, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১২০টি সীমকার্ড, সিম এ্যক্টিভেট করার ১টি ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন, ১টি ট্যাব, ৩২টি মোবাইল, ১টি পাসপোর্ট, নোটবুক এবং চক্রের সদস্যদের বেতনের হিসাব বিবরণী জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এই প্রতারক চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার বেলালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, বেলাল ২০২১ সালের মার্চ মাসে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার জন্য কুমিল্লা জেলার একটি হাসপাতালে করোনা টেস্ট করার পর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ঐ হাসপাতালের ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার করোনা টেস্টের ফলাফল পজেটিভ এসেছে বলে জানায়। পরে ঐ ব্যক্তি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বেলালের করোনা টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ করার প্রতিশ্রুতি দিলে, সে চড়া মূল্যের টিকেট নষ্ট না করে ঐ ব্যক্তিকে বিশ্বাস করে ১০ হাজার টাকা দেয়। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে করোনা পজেটিভ ফলাফল দেয়। ফলাফল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে ঐ অজ্ঞাত পরিচয়ধারী কেউ উক্ত হাসপাতালে কর্মরত নেই বলে জানতে পারে এবং সে বুঝতে পারে সে প্রতারিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, একই বছরের এপ্রিলে করোনা টেস্ট নেগেটিভ আসার পর বেলাল ওমানের উদ্দেশ্যে গমণ করে। তবে মার্চ থেকে এপ্রিল এই সময়ে বেলাল প্রতারণার এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে ব্যাপক বিচার বিশ্লেষণ করে এবং প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশগামী যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার রুপ রেখা তৈরী করে। তবে তার বিদেশে গমণের নির্ধারিত তারিখ চলে আসায় সে তার এই পরিকল্পনা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সবুজকে জানায়। সবুজকে প্রতারণার একটি টিম তৈরী করে দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা সমানভাগে বন্টনের প্রতিশ্রুতিতে সে বিদেশ চলে যায়।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, সবুজ প্রতারণার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে তবে বেলালকে যে অর্থ পাঠাতো তা নিয়ে বেলালের সবসময় সংশয় থেকে যায়। এই সংশয় থেকেই মূলত বেলাল ৪ মাস বিদেশে অবস্থান করে ২০২১ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে দেশে চলে আসে। এবার সে তার আরেকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু জসিমকে এই প্রতারণার কাজে সম্পৃক্ত করে। যেহেতু প্রতারণার এই প্রক্রিয়াটি খুবুই ঝুঁকিপূর্ণ তাই সে তার মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা সচল রাখার জন্য পুনরায় ডিসেম্বর মাসে বিদেশ যায় এবং জানুয়ারি মাসে প্রতারণার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবার দেশে চলে আসে। বেলাল, সবুজ ও জসিম ৪-৫ বছর আগে চট্টগ্রামে এক সাথে ভ্রাম্যমাণ কসমেটিক্স এর ব্যবসা করত। সেই সূত্র ধরেই তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার আবুল হোসেন নারায়ণগঞ্জ ও বি-বাড়িয়া জেলায়, আব্দুর নূর নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা জেলায়, আহাম্মেদ হোসেন চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ জেলায়, আব্দুর রশিদ রাজধানী ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ জেলায়, আব্দুল করিম কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা জেলায়, আলমগীর সিলেট, মৌলভি বাজার এবং হবিগঞ্জ জেলায়, আঙ্গুর মিয়া কুমিল্লা, মৌলভিবাজার এবং হবিগঞ্জ জেলায় সরকার নির্ধারিত বিদেশগামীদের করোনা টেস্ট হাসপাতালসমূহে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বিদেশগামী যাত্রী ছদ্মবেশে অবস্থান করে এবং অত্যন্ত কৌশলে অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদের নম্বরগুলো সংগ্রহ করে। নম্বরগুলো সংগ্রহ করে বেলাল ও সবুজকে দিতো। বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের প্রকৃত করোনা টেস্টের ফলাফল হাতে পাওয়ার আগেই বেলাল ও সবুজ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের করোনা বিভাগের ডাক্তার/হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিচয় দিয়ে ভূক্তভোগীদের নম্বরে কল দিয়ে করোনা টেস্টের ফলাফল পজেটিভ আসছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রদান করত।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন জানান, উক্ত পজেটিভ রেজাল্ট নেগেটিভ করে দেয়ার কথা বলে প্রতি ভূক্তভোগীর কাছ থেকে জন প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পাঁচ থেকে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিত। আলফাজ, জসিম, শামিম ও সুলতান একই সময়ে বেলাল ও সবুজকে বিভিন্ন জায়গার মোবাইল ব্যাংকিং এর নাম্বার প্রদান করতো এবং ভূক্তভোগীরা বেলাল ও সবুজ এর কথা অনুযায়ী ঐ সমস্ত নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পাঠালে আলফাজ, জসিম, শামিম ও সুলতান স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে তা সংগ্রহ করতো। ভূক্তভোগীর অবস্থান ও টাকা সংগ্রহের অবস্থান সব সময় ভিন্ন ভিন্ন জেলায় নির্ধারন করা হতো, যাতে কেউ কোন কিছু আঁচ করতে না পারে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার আসামীরা একটি সিম একদিন ব্যবহার করে তা কিছুদিন বন্ধ রেখে পুনরায় ব্যবহার করতো এবং কোন নাম্বার নিয়ে সন্দেহ হলে তা ফেলে দিত। প্রতারণার এই পদ্ধতিটি সম্পন্ন করার জন্য মো. মিলন খোলা বাজারের একশত ২০ টাকার সিম ভূয়া রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে এক হাজার টাকার বিনিময়ে বেলাল ও সবুজকে দিতো। তাদের এমব কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে গ্রেপ্তার আসামীরা জানায়।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা কেউ প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পার হয়নি। তথাপি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সুকৌশলে শত শত মোবাইল সিম নামে-বেনামে উত্তোলন করে প্রতারণা করে আসছে। প্রতারণার মাধ্যমে মো. সবুজ মিয়া জানায়, গত ১০ মাসে সে প্রায় হাজারের অধিক বিদেশগামী যাত্রীর নিকট হতে জনপ্রতি ১০-১৫ হাজার করে প্রায় এক কোটি টাকা আয় করেছে এবং ওই টাকা দিয়ে সে তার গ্রামের বাড়িতে একটি অট্টালিকা তৈরি করেছে।

অন্যদিকে কাজী মো. বেলাল হোসেন বিদেশ থেকে এসে এই অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৬ শতাধিক বিদেশগামী যাত্রীদের কাছ থেকে জন প্রতি ১০-১৫ হাজার করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয় করে। বাকি সদস্যরা এই প্রতারণার মাধ্যমে প্রতি মাসে ২৫/৩০ হাজার টাকা আয় করত বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফজেড/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত