ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

দেবিদ্বারে সড়কের চাঁদা যায় কোথায়?

  কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:৪০

দেবিদ্বারে সড়কের চাঁদা যায় কোথায়?
ছবি: প্রতিনিধি

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় সড়কপথে যাতায়াতের এক ব্যস্ততম রুট চট্টগ্রাম-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে অতিক্রম করেছে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুটি ফাঁড়ি রোড (চান্দিনা হয়ে দেবিদ্বার পৌরসভা ও দাউদকান্দির গৌরীপুর-ইলিয়টগঞ্জ হয়ে পান্নারপুল) দেবিদ্বারে প্রবেশ করেছে।

ব্যস্ততম এই উপজেলার সড়ক গুলোতে কোটি টাকার চাঁদার তোলা হচ্ছে নিয়মিত। বিষয়টি অনেকটা ’ওপেন সে সিক্রেট’। সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর দেবিদ্বার উপজেলার ৫জনসহ পুরো কুমিল্লা থেকে ২৭ জনকে সড়কে চাঁদা আদায়কালে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে দেবিদ্বারে ৫ চাঁদাবাজ র‍্যাবের হাতে আটক হলেও বন্ধ হয়নি চাঁদা আদায়। তাদের স্থানে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন নতুন চাঁদাবাজ।

বাংলাদেশ জার্নাল এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সেই চিত্র। দেবিদ্বার উপজেলার গোমতী পাড়ের শীমনগর মোড়, পৌরসভা, পান্নারপুল ও গুনাইঘর থেকে তোলা হয় চাঁদা। এসব সড়কে চলাচল করা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা (মিশুক), রিক্সা, পিকআপ, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকদের দিতে হয় চাঁদা।

মূল ইজারায় বলা হয়েছে, কেবল সিএনজি অটোরিকশা থেকে ৫ টাকা হারে আদায় করতে পারবে চাঁদা। তবে প্রতিদিন সিএনজি অটোরিকশা, মিশুক ও রিক্সাকে ৪০ টাকা করে দিতে হয়।

পৌরসভার নামে ইজারা থাকলেও চাঁদা আদায় হয় ৪টি স্থান থেকে। প্রত্যেকটি জায়গায় একটি গাড়িকে বাধ্যতামূলক ভাবে চাঁদা দিতে হয়। পিকআপ, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক গুলো থেকে আদায় করা হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা হারে। চাঁদা না দিলে গাড়ি আটক করে রাখাসহ চলে নানা রকম হয়রানি। সড়কে চলন্ত গাড়ি দাঁড় করিয়ে এসব চাঁদা আদায় করা হয়। ফলে সৃষ্টি হয় যানজটেরও।

উপরের চাঁদা গুলো কেবল দিতে হয় দৈনিক চাঁদা হিসেবে। এছাড়া এখানে রয়েছে মোটা অঙ্কের নানা নামের মাসিক চাঁদা। উপজেলার এসব যানবাহনকে মাসিক ‘থানা-সার্জেন্ট-হাইওয়ে’ এই তিন নামে চাঁদা দিতে হয়।

‘থানা’ চাঁদা মাসিক ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, সার্জেন্ট চাঁদা মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও হাইওয়ে চাঁদা মাসে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। সার্জেন্ট ও থানা চাঁদা আদায়ে চালকদের একটি বিশেষ রশিদ দেওয়া হয়। যাতে বিশেষ ফুল ও ফলের ছবি থাকে। নির্দিষ্ট একটি গোপন সিল মারা হয় তাতে। নিচের অংশে উল্লেখ্য থাকে চলতি মাসের তারিখ। আর এসব রশিদ যানবাহনের টোল বক্সের ভিতর লাগিয়ে রাখা হয়।

‘হাইওয়ে’ চাঁদার জন্য থানা ও সার্জেন্ট চাঁদার মতো কোনো রশিদ চালকদের না দেওয়া হলেও, দালালদের নিকট থাকে এক রকম হাজিরা খাতা। সেই খাতায় গাড়ির ইঞ্জিন নম্বর অনুসারে লেখা থাকে চাঁদার হিসেব।

অভিযোগ আছে, এসব চাঁদা না দিলে সড়কে গাড়ি চালাতে দেওয়া হয় না। নানা সময় গাড়ি গুলো পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে বিভিন্ন অযুহাতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেবিদ্বার উপজেলার একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান, ‘হাইওয়েতে (কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক) সিএনজি অটোরিকশা ও পিকআপ চালাতে গেলে হাইওয়ে চাঁদা দিতে হয়। দেবিদ্বারে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে সিএন্ডবি ও মিরপুরে হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্ট রয়েছে। যদি কোনো গাড়ি চাঁদা না দেয় দালাল ঐগাড়ি ইশারা দিয়ে পুলিশকে দেখিয়ে দেয়, তারপর ঐগাড়ি পুলিশ আটক করে নানা রকম হয়রানিমূলক জরিমানা করে।

দেবিদ্বার উপজেলায় মহাসড়ক ও ফাঁড়ি সড়ক গুলোতে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। এছাড়া দুই শতাধিক মিশুক ও শতাধিক পিকআপ চলাচল করে। হিসেব মতে, এসব গাড়ি থেকে প্রতি দিনের চাঁদা আদায় হয় এক লাখ টাকা। যা মাসে ৩০ লাখে দাঁড়ায়।

অপর দিকে, সিএনজি ও পিকআপ সমূহে মাসিক ‘থানা-সার্জেন্ট-হাইওয়ে’ চাঁদার আদায় করা হয় পনের লাখ টাকা। বাৎসরিক হিসেবে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি আশি লাখ টাকা।

প্রশ্ন হলো, এসব টাকা যায় কার পকেটে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় শতাধিক সিএনজি ও পিকআপ চালকের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, দেবিদ্বারের নির্দিষ্ট পয়েন্ট হতে দৈনিক চাঁদা তুলে ক্ষমতাশীল বিভিন্ন নেতার কর্মীরা। মাসিক চাঁদার মধ্যে হাইওয়ে চাঁদা আদায়ে কাজ করে একাধিক দালাল চক্র। থানা ও সার্জেন্ট নামে চাঁদায় করে দালাল চক্র ও বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনের কেরানিরা। এসব দালালের হাত ধরে টাকা যায় নেতা প্রশাসন কর্মকর্তাদের পকেটে।

তবে এই বিষয়ে দেবিদ্বার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, 'থানা চাঁদার বিষয়টি আমি প্রথম শুনলাম। থানার এই ধরনের কোনো চাঁদার নিয়ম নেই। চালকদের এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলবো।' তিনি বলেন,' দৈনিক যে টাকা আদায় করা হয় তার বৈধ কাগজ আছে কি না, আমি উপজেলা প্রশাসকের কাছে জানতে চেয়েছি। ইউএনও স্যার বলেছেন এগুলো সাবেক ইউএনও ইজারা দিয়েছেন।

দেবিদ্বার পৌর সচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের ইজারায় ৫ টাকা করে শুধু সিএনজি অটোরিকশা থেকে টাকা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কেউ বেশি নিলে প্রশাসন দেখবে, এটা তো আমরা কিছু করতে পারবো না।'

মিরপুর হাইওয়ে থানার ওসি মাসুদ আলম বলেন, 'হাইওয়ে থানা চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিবো। সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত