যেসব খাতে পড়তে পারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রভাব
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১৯:০২ আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১৯:১১
সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার প্রতিবাদে আজ দ্বিতীয় দিনের মত দেশজুড়ে গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন ধর্মঘট চলছে। পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, তেলের দাম বাড়ালে পরিবহন ভাড়াও বাড়াতে হবে। বিবিসি জানায়, কাল সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ নিয়ে তাদের বৈঠক রয়েছে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষক থেকে শুরু করে নাগরিক মধ্যবিত্তরা ভোগান্তির শিকার হবেন বেশি।
তেমনি একজন মনসুরা সোনিয়া; থাকেন ঢাকার উত্তরায়। পেশায় শিক্ষক এই নারী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন সংসারের খরচ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
মনসুরা সোনিয়ার শঙ্কা, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে। সুতরাং সংসারের মৌলিক চাহিদা মেটানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা সাধারণ মধ্যবিত্ত তাদের সমস্যা কিন্তু প্রকট। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো মুখ ফুটে বলতে পারি না। আমাদের যেটা বেসিক নিড বা অতি জরুরী পণ্য, সেটা কেনাও অনেক কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের আয় তো বাড়েনি। ক্ষেত্র বিশেষে কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে আমার একটা হিসেব আছে। আমি চাল কিনছি আরও অন্যান্য জিনিস কিনছি। কিন্তু এখন বেসিক জিনিস কিনতে হলে বাচ্চাদের জন্য মূল্যবান আইটেম যা কিনতাম, সেগুলো বাদ দিতে হবে।’
কৃষি এবং পরিবহনের ভাড়া: বাংলাদেশের সরকার বুধবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
এর পর দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন মালিক সমিতি যাত্রী ও পণ্যবাহী যান ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়, যা শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়ে শনিবার পর্যন্ত বহাল আছে। তাদের এ ধর্মঘটের ঘোষণাকে পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটিও সমর্থন দিয়েছে।
ফলে ঢাকার প্রধান বাসস্ট্যান্ডগুলো রয়েছে বন্ধ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে বাস, ট্রাক, কভার্ড ভ্যানের ভাড়ায়। লঞ্চসহ নৌযানের ভাড়াও বাড়বে।
আর এর পরোক্ষ প্রভাব পড়বে অনেক খাতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, প্রথম প্রভাব পড়বে কৃষকের উপর, দ্বিতীয় পড়বে পণ্য পরিবহনের উপর।
তিনি বলেন, কৃষকদের একটা বড় খরচ- সেচ কাজ। সেখানে ডিজেল ব্যবহার করে। এরপর সে পণ্য ট্রাক কিংবা নৌযানে করে বাজারে নেয়া হয়। ভাড়া বেড়ে গেলে শাক-সবজি থেকে শুরু করে কৃষকদের উৎপাদিত সব খাদ্যশস্যের দাম বাড়বে। ফলে ভোক্তারা ওপর অতিরিক্ত একটা চাপ তৈরি করবে।’
পরিবহণ ধর্মঘটের প্রভাবে গাবতলি বাসস্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টারে শনিবার লোক সমাগম দেখা যায়নি। ছবি: বিবিসি
বিদ্যুৎ ও মূল্যস্ফীতি: এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়। তারা মনে করছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক সক্ষমতায় চাপ পড়তে পারে এ পরিস্থিতিতে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অর্থনীতি এমনিতেই একটু সংকুচিত অবস্থায়। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়াবে।
তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে দেখা যায়, একটা বাজারে যখন সরবরাহের চাইতে চাহিদা বেশি, তখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তেলের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগে অনেকে সেটা মজুদ করে রাখে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সেটাও মজুদ করে রাখে। তখন বাজারে একটা কৃত্রিম চাপ সৃষ্টি হয়। যখন এ মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষের উপর দিয়ে পড়ে, সামগ্রিকভাবে মানুষের আয়ের উপর চাপ পড়ে।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে, যার ভুক্তভোগী হতে হবে সাধারণ মানুষকে।
বাংলাদেশ জার্নাল/ টিটি