ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : ৬ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

কক্সবাজার বিমানবন্দর

সাগর ভরাট করে যেভাবে তৈরি হচ্ছে রানওয়ে

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২১, ২০:০১  
আপডেট :
 ২৮ আগস্ট ২০২১, ২০:১১

সাগর ভরাট করে যেভাবে তৈরি হচ্ছে রানওয়ে

পর্যটননগরী কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের এই রানওয়ের একটি অংশ থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভেতরে। রোববার প্রায় তিন হাজার সাত শ দশ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন এ রানওয়ে নির্মাণের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমানে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েটিই সবচেয়ে দীর্ঘ। এর দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৫০০ ফুট। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এই রানওয়ের ১৩ শ’ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে, জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ইউসুফ ভূঁইয়া। খবর বিবিসি বাংলার।

রানওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে যখন উড়োজাহাজ অবতরণ করবে বা উড্ডনয়ন করবে তখন উড়োজাহাজের দু’পাশে থাকবে বঙ্গোপসাগরের জলরাশি।

এর আগে ২০১৫ সালের প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে নয় হাজার ফুট এবং প্রস্থ ১২০ ফুট থেকে ২০০ ফুটে উন্নতকরণ করা হয়েছিল। এবারে সেটাকে আরো ১৭ শ’ ফুট বাড়ানো হচ্ছে। এ জন্য এই বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের পাশাপাশি আরো কয়েকটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

তৈরি করা হচ্ছে, নতুন টার্মিনাল ভবন। এ ছাড়া বসানো হচ্ছে গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম, সেন্ট্রাল লাইন লাইট, সমুদ্র বুকের ৯০০ মিটার পর্যন্ত প্রিসিশন এপ্রোচ লাইটিং, ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম, নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ ও বাঁকখালী নদীর উপর সংযোগ সেতু। সব মিলিয়ে প্রায় পৌনে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। তবে শুধু রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য খরচ করা হচ্ছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি।

যেভাবে সমুদ্রের ভেতরে তৈরি করা হচ্ছে রানওয়ে

রানওয়ের মূল নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ইউসুফ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী ও চলতি বর্ষার বেশির ভাগ সময়ই বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও রানওয়ের কাজ থেমে নেই। পুরো বিমানবন্দর এলাকার ময়লা আবর্জনা সরানো থেকে মাটি কাটা ও ঢালাইয়ের কাজ সমানে চলছে।

মহেশখালী চ্যানেলে দিকে ভূমি অধিগ্রহণ করে মাধ্যমে রানওয়ে সম্প্রসারিত করা হবে। সম্প্রসারিত অংশ সমুদ্রের যেটুকুজুড়ে হবে সেখানে পানিতে ব্লক, জিওটিউব ইত্যাদি ব্যবহার করে শুরুতেই একটি বাঁধের মতো তৈরি করা হবে। পরে বাঁধের ভেতরকার পানি সেচ করে ফেলা হবে ও গভীর সমুদ্র থেকে ড্রেজিং করে ভেতরে এনে ফেলা হবে বালি। বালি দিয়ে ভরাটের মাধ্যমে সমুদ্রের ওই অংশটি ভরাট হলে সেখানে 'স্যান্ড পাইলিং'-এর মাধ্যমে রানওয়ের ভিত তৈরি করা হবে। সবশেষে পাথরের স্তর বসিয়ে পুরো রানওয়ে সিল করে দেয়া হবে। তার ওপর হবে পিস ঢালাইয়ের কাজ। এরপর হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপনের বাকি কাজ, বলছেন প্রকৌশলীরা। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এই প্রক্রিয়ায় কোনো বিমানবন্দরের রানওয়ে তৈরি হচ্ছে। শুরুতে পরিকল্পনা করা হয়েছিল শহরের দিকে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা যায় কি না। কিন্তু দেখা যায়, এতে শহরের একটি বড় অংশ বিমানবন্দরের দখলে চলে যাবে। যার মধ্যে বিলাসবহুল কয়েকটি হোটেল, আবাসিক ভবন, লাবনি বিচ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনা রয়েছে। এ কারণে বিমানবন্দরের উল্টো পাশে মহেশখালী চ্যানেলের দিকে সমুদ্রের ওপরেই এই রানওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বিমানবন্দর প্রকল্পের প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপের বুক চিরে মহেশখালী চ্যানেলের কিয়দংশ ভরাটের মাধ্যমে যখন কক্সবাজার বিমানবন্দরটির রানওয়ের পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে তখন দেখা যাবে সৌন্দর্য্যের আরেক ভিন্ন জগৎ। সব মিলে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শেষ হতে তিন বছরের কিছু কম সময় লাগবে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ দু’টি চীনা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ওই দু’টি প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

যে কারণে বাড়ানো হচ্ছে রানওয়ে

বর্তমানে কক্সবাজারের রানওয়ে ও অবকাঠামো সব ধরনের বিমান চলাচলের জন্য উপযোগী না। কর্মকর্তারা বলছেন, রানওয়ে সম্প্রসারণ হলে এই বিমানবন্দরে বিশ্বের সবচেয়ে সুপরিসর উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭ ও বোয়িং ৭৪৭-এর মডেলের যাত্রীবোঝাই বিমানও এখান থেকে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। এছাড়া এখানে রিফুয়েলিংয়েরও ব্যবস্থা থাকবে।

সবমিলিয়ে বিমানবন্দরটিতে দেশী-বিদেশী সরাসরি ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে কক্সবাজারে দেশী-বিদেশী পর্যটকের আনাগোনা আরো বাড়বে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ জার্নাল- বিএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত