জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি, একাংশের বিক্ষোভ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২০, ২২:৪৭ আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২০, ২২:৫০
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের ১৪ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে সদ্য বিলুপ্ত কক্সবাজার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মারুফ আদনানকে। এর সঙ্গে আরো ১২ জনকে সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক করে এক বছরের জন্য এ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সোমবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ১৪ জনের নতুন এ কমিটির অনুমোদন দেন।
জেলা ছাত্রলীগের ১৪ সদস্যের বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ ও অবাঞ্চিত ঘোষণা করে শহরের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
কমিটি অনুমোদন সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার জেলা শাখার মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। সেই সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে আগামী এক বছরের জন্য নতুন এই কমিটির অনুমোদন দেয়া হলো।
নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে- মো. মাইন উদ্দিন, কাইসার উল আলম মুন্না চৌধুরী, বোরহান উদ্দিন খোকন, নারিমা জাহানকে। যুগ্ম-সম্পাদক করা হয়েছে- আনোয়ার হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদুল হক, মো. শওকত হোসেনকে। সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়াসিফ কবির, কামরুজ্জামান হিরু, এহসানুল হক মিলন ও গাজী নাজমুল হক।
২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে জেলা ছাত্রলীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের এক মাস পর ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি ইশতিয়াক আহমেদ জয়কে সভাপতি ও ইমরুল হাসান রাশেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষিত হয় কমিটি।
সোমবার সন্ধ্যায় সংগঠনটির কেন্দ্রিয় সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য স্বাক্ষরিত নতুন কমিটির নেতাদের নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই জেলা ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েন। শহরের প্রধান সড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে। এতে আধা-ঘন্টাব্যাপী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে সড়ক অবরোধ তুলে নেয়া হয়। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি, নতুন ঘোষিত কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। বৈধ কমিটি বহাল থাকার পরও কেন্দ্রিয় কমিটি অগঠনতান্ত্রিকভাবে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রিয় সংসদের নেতারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে বলেও দাবি করেন বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মিরা।
অন্যদিকে নতুন কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জেলা শহরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সন্ধ্যায় জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ দাবি করে নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন, ‘কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের ঘোষিত এই কমিটি অবৈধ। এই কমিটি অবাঞ্চিত ঘোষণা করলাম।’
পরে আরেকটি স্ট্যাটাসে ইশতিয়াক আহমেদ জয় লিখেন। যা নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো: কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে আমাদের কয়েকটি যুক্তিসঙ্গত কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে, এ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর জানার অধিকার নিশ্চয়ই আমাদের সকলের আছে-
১) কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কমিটিতে যে দুজনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, তারা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পড়াশোনা করছে? তাদের কি ছাত্রত্ব আছে?
[ আমাদের জানা মতে, এই দুজনের কারওই ছাত্রত্ব নাই। আর ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যাদের ছাত্রত্ব নাই তারা কেউই ছাত্রলীগের নেতা হতে পারবে না। নাকি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে স্বেচ্ছাচারী যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে?]
২) কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কমিটিতে যে দুজনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, তাদের কারওই বয়স নাই। বয়স না থাকা কেউকে কি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে স্বৈরাচারী আচরণে নেতা বানাতে পারে?
[সাদ্দাম হোসেনের ভোটার আইডি নং- ২২১৫৬৪০০০০৩৫]
মারুফ আদনানের ভোটার আইডি নং- ১৯৯০২২২২৪০৩০০০০০৮]
৩) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যাকে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি করেছেন, তার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামী। এরকম কোন আসামীকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা বানাতে পারে কি?
মামলা নং - ৩৯/১৪১২০১৭
৪) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছেন, তার বিরুদ্ধে মটর সাইকেল চুরির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে জানতে চাই, এরকম অভিযুক্ত কেউকে কি ছাত্রলীগের নেতা বানাতে পারেন?
৫) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা সম্মেলন করতে রাজি হয় নাই। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সম্মেলন করতে অনিচ্ছা ছিলো কেন?
অবশেষে একটা কথাই বলতে চাই, ছাত্রলীগ একটা আবেগের নাম, এই আবেগ নিয়ে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করা বন্ধ করতে হবে। সংগঠনের মঙ্গলের জন্য পকেট কমিটি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে