ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপন সোমবার
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৩২ আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৩৫
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত আইনের প্রস্তাব সোমবার মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এই প্রস্তাব করা হচ্ছে।’
সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা বাড়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেন সব বয়সী মানুষ।
এদিকে বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলার অন্যতম আসামি আবুল কালামকে তিন মামলায় ১০ দিনের ও সাহেদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বিচারক মাসফিকুল হক তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরকারি কৌঁসুলি গুলজার আহমেদ জুয়েল।
তিনি বলেন, দুপুরে আবুল কালাম ও শাহেদকে আদালতে আনা হয়। শুনানি শেষে বিকেলে আবুল কালামের তিন মামলায় ১০ দিনের ও সাহেদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এ ঘটনায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গ্রেপ্তার তিনজনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে রিমান্ডে নেয়া হলো।
৪ সেপ্টেম্বর নারী নির্যাতনের দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। ৬ অক্টোবর রাতে দোলোয়ার ও কালামকে আসামি করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন তিনি।
মামলার এজাহারে নির্যাতনের শিকার ওই নারী অভিযোগ করেছেন, গত ২ সেপ্টেম্বর দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার আগে দেলোয়ার দু’বার তাকে ধর্ষণ করেছিলেন। এর মধ্যে একবার ধর্ষণ করা হয় প্রায় এক বছর আগে। আর দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করা হয় রমজান মাসের কিছুদিন আগে। দ্বিতীয়বার ধর্ষণের ঘটনার দিন দেলোয়ারের সহযোগী কালামও তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
বুধবার রাতে উপজেলার একলাশপুর থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতে তোলা হয়।
এর আগে মামলার অন্যতম আসামি দেলোয়ারের সহযোগী আবুল কালামকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করে রাতেই বেগমগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এরই মধ্যে মামলার অপর আসামি ইউপি সদস্য মেয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করায় বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে তোলা হয়।
গত ২ সেপ্টেম্বর ওই গৃহবধূর স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে দীর্ঘদিন পর বাবার বাড়িতে আসেন। রাত ৯টার দিকে শয়নকক্ষে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে ছিলেন। এ সময় বাদল, রহিম, আবুল কালাম, ইসরাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্লাহসহ অজ্ঞাত কয়েকজন দরজা ভেঙে তাদের ঘরে প্রবেশ করেন। এরপর তার স্বামীকে মারধর করে পাশের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন।
একপর্যায়ে তারা ওই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এতে রাজি না হলে তারা তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালান এবং মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা কাউকে কিছু জানালে তাকে হত্যার হুমকি দেন। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর কাউকে কিছু না জানিয়ে নির্যাতিত ওই গৃহবধূ জেলা শহর মাইজদীতে বোনের বাড়ি আশ্রয় নেন।
সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে হামলাকারীরা তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। টনক নড়ে প্রশাসনের। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: গ্রেপ্তার আরও ১
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ঘটনার ১ মাস পর আটক ১
বিবস্ত্র করে নির্যাতন: ইউপি মেম্বারসহ গ্রেপ্তার আরো ২
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, গ্রেপ্তার আরও একজন
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ৪
নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: দুই আসামি রিমান্ডে
এ রায় অন্য আলোচিত মামলায় গতি আনবে: আইনমন্ত্রী
মৃত্যুদণ্ডের আইন কি বাংলাদেশে ধর্ষণ বন্ধের সমাধান?
‘ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে ভাবছে সরকার’
বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই