৫০ হাজার টাকার জন্য সেই বধূর উপর ওরা হামলে পড়ে
সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৫৫ আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:১৩
স্বামীকে বেঁধে রেখে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনা এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। এ মামলায় এখন পর্যন্ত প্রধান আসামি সাইফুরসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, নির্যাতিতার স্বামী জানিয়েছেন, ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল অভিযুক্তরা। ওই নির্যাতিতা নারীর স্বামী আরো বলেন, ৫০ হাজার টাকা না দিলে আমার স্ত্রী ও আর আমার সমস্যা হবে বলে জানায় তারা। আমি তখন তাকে ২ হাজার টাকা আছে বলি।
ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ৫০ হাজার টাকা না পেয়ে গাড়িতে করে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নেয়ার পর স্বামীর সামনেই ৫/৬ জন গণধর্ষণ করে।
এদিকে এ ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ স্বীকার করেন তার ব্যর্থতার কথা। করোনা মহামারির কারণে ১৮ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাসগুলোও বন্ধ। এরপরও কিভাবে, বন্ধ ক্যাম্পাসে রাজনীতির নামে ছাত্রাবাস দখলে রাখা হয়েছিলো সেই প্রশ্নই উঠছে ঘুরে ফিরে।
সাবেক শিক্ষার্থীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
জানা গেছে, হোস্টেল সুপারের বাসা দখল করেছিলো গণধর্ষণের প্রধান অভিযুক্ত সাইফুর রহমান। কলেজের অধ্যক্ষের কথায় হোস্টেলে ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের অবস্থানে অসহায়ত্ব ফুটে উঠে।
এমসি কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সালেহ আহমদ বলেন, হোস্টেল সুপারের বাসা দখল করে থাকত তাদের মধ্যে একজন এই ঘটনায় জড়িত।
এই ঘটনার দায় কলেজ কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে বলে মত বিশিষ্টজনেরা।
শুক্রবার রাতে ছাত্রাবাসে গণধর্ষ’ণের ঘটনার পর শনিবার ছাত্রাবাসটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। এই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট এবং সাতদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ (এম,সি কলেজ) ক্যাম্পাসে সম্প্রতি সংঘটিত ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় কোনোরূপ ঘাটতি ছিলো কিনা তা সরেজমিনে তদন্তপূর্বক ও বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ২০ বছরের এক তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে সিলেটের এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকজন বখাটে তরুণী ও তার স্বামীকে জোরপূর্বক কলেজ ছাত্রাবাসে তোলে নিয়ে যায়। পরে স্বামীকে গাড়িতে আটকে রেখে ৫/৬ জন মিলে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। রাত ১০টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে উদ্ধার করে। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ওই তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় শনিবার সকালে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলা ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসামি করা হয়।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন লস্কর ও বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল এবং তারেক আহমদ। এছাড়া অজ্ঞাতনামা তিনজনকেও আসামি করা হয়।
এ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলামকে ৫ দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সিলেট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট-২ আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বেলা ১২ টায় প্রথমে সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৫ দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে বেলা ৩ টায় মামলার অপর আসামি রবিউল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময়ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সাইফুরকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে পৃথক এক অভিযানে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা থেকে অর্জুন লস্করকেও গ্রেপ্তার করা হয়। একইদিন রাতে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব আর নবীগঞ্জ থেকে রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রোববার দিবাগত রাত ১ টার দিকে গণধর্ষণের ঘটনায় রাজন নামের ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯। এসময় রাজনকে সহযোগিতায় করায় আইনুদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তিকেও আটক করা হয়। এ দুজনকেও আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আরও পড়ুন-
এমসি কলেজে ধর্ষণ ঘটনায় ৫ আসামি গ্রেপ্তার
সুযোগ পেলেই ছাত্রীদের ওড়না ধরে টানাটানি করতো রবিউল
বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ