সিলেটের এমসি কলেজে যা ঘটেছে
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:৪০ আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:০৯
নীরব, থমথমে সন্ধ্যা। স্বামীর সাথে একটি গাড়ি থেকে নেমে এলেন এক তরুণী। তারা একসাথে ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন। এমসি কলেজের ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে ঘুরে এই দম্পতি শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সিলেটের টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজের গেটের সামনে এসে পৌঁছান। এখানে কিছুটা অন্ধকারে পাশাপাশি আশপাশে লোকজনের উপস্থিতি ছিলো না। এ অবস্থায় ওই দম্পতির সামনে এসে দাঁড়ায় একদল তরুণ। ওই দম্পতি তখন গাড়িতে করে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তরুণের দল তাদের গতিরোধ করে সাথে যা আছে তা দিতে বলেন। প্রায় নয়জনের মতো লোক ছিলো এই দলে। এমতাবস্থায় নিজেদের সাথে থাকা টাকা-মোবাইলসহ অন্যান্য দ্রবাদি ওই দলটির কাছে তুলে দেন তারা।
কিন্তু এসবে সন্তুষ্ট না হলে ওই তরুণের দল তরুণীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তার স্বামীর থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে তাকেও ধরে নিয়ে যায় হিংস্র যুবকের দল। তারা স্ত্রীকে আর স্বামীকে প্রথমে একটি ঘরে আটকে রাখে। এরপর তরুণীর স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর শুরু করে কথিত ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা। আর ওই তরুণী নারীকে গণধর্ষণ করে তিন-চারজন নেতা-কর্মী।
ঘণ্টাখানেক পর ওই নারীকে ও তার স্বামীকে ছেড়ে দেয় তরুণের দল। তখন নিজের স্ত্রীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন স্বামী। রাতেই ঐ তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
এমসি কলেজের হোস্টেলের পাশের আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা জানান, রাতে বেশ কিছুক্ষণ ছাত্রাবাসের ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন তিনি। পরে একপর্যায়ে নারী কন্ঠের চিৎকার শুনতে পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় আরো কয়েকজনকে নিয়ে ছাত্রাবাস এলাকার ভেতরে প্রবেশ করেন।
গণধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ছবি: প্রতিনিধি
সেসময় হোস্টেলের পাশের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে কর্মচারীরা জড়ো হলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন তারা। সকালে এই ঘটনার প্রতিবাদে এমসি কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর থেকে কলেজের মূল প্রবেশদ্বারের বাইরে ও টিলাগড় এলাকাসহ আশেপাশের এলাকাতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে পুলিশ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া গাড়িটি উদ্ধার করে। এরই মধ্যে সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী কর্তৃক বিবাহিত তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৯ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি বহিস্কার করা হয়েছে ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তা কর্মীকে।
সিলেট এমসি কলেজে গৃহবধূকে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতায় অভিযুক্ত যেসব ছাত্রলীগ নেতা। ছবি: সংগৃহীত
মামলার আসামীদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন: এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর, শাহ রনি, অর্জুন, মাহফুজ, রবিউল ও তারেক। তারা সবাই সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে।
এদিকে মালার আসামিরা কেউ ছাত্রলীগের কর্মী না বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিয়ান খান জয়। তিনি জানিয়েছেন, সিলেটের এমসি কলেজে ১২ বছর ধরে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। জয় বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সিলেটের তারা তো ছাত্রলীগের কোনো পদধারী নেতাকর্মী না। ওই কলেজে কমিটি নেই ১২ বছর। আমরা ধর্ষকের বিচার চাই। যারা অভিযুক্ত তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া দরকার। আমরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছেও তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি।
হোটেল বন্ধের পরেও কীভাবে কিছু শিক্ষার্থী হলে থেকে গেলেন তা সামনে আসতেই প্রশ্ন ওঠে কলেজ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে। তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু এখনই না বললেও শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসের সুপার ও পলিটিক্যাল সায়েন্সের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর জীবন কৃষ্ণ আচার্য্য গণমাধ্যমকে বলেছেন, আসলে হোস্টেল বন্ধ থাকলে আনঅফিসিয়ালি কিছু ছাত্র হোস্টেলে রয়ে গেছে। যারা টিউশনি করে এমন ছাত্ররা ছিল। তবে অভিযুক্তরা আমাদের কলেজের ছাত্র কি-না সেটা যাচাই-বাছাই করে জানাতে পারব।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহা. সোহেল রেজা পিপিএম বাংলাদেশ জার্নালকে জানান- রাত ৯টার দিকে তিন-চারজন মিলে এমসি কলেজ গেট থেকে ওই তরুণীকে ধরে নিয়ে যায়। এসময় তার স্বামী বাঁধা দিলে তাকেও মারধর করে তারা। পরে তাকে বালুচরস্থ কলেজ হোস্টেলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে অভিযুক্তদের। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে
আরো পড়ুন:
> সিলেটে গণধর্ষণের ঘটনায় ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
> স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ করল ছাত্রলীগের কর্মীরা
> ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ, প্রতিবাদে উত্তাল এমসি কলেজ
> সিলেটে গণধর্ষণের ঘটনায় ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা