ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : ৮ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

মসজিদে বিস্ফোরণ

মায়ের বাড়া ভাত খাওয়া হলো না দুই ছেলের

  সুশান্ত সাহা

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৩৭

মায়ের বাড়া ভাত খাওয়া হলো না দুই ছেলের

তিন সন্তান নামাজ পড়তে একসঙ্গে গিয়েছিলো মসজিদে। যাওয়ার আগে মা’কে বলে গিয়েছিল, ‘এশার নামাজ পড়ে এসেই খাবে। ভাত বেড়ে রাখো।’ তাদের একজন বাড়ি ফিরলেও কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলের আর ফিরে আসেনি। মা সারাজীবন অপেক্ষায় থাকবেন। কিন্তু কোনোদিন আর আসবে না সেই দুই ছেলে।

সোমবার নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাসিন্দা নুরুউদ্দিন মুন্সী বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একই এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদ নামাজ পড়তে গিয়ে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে গতকাল রোববার ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুরুউদ্দিন-পারুল দম্পতির দুই ছেলে সাব্বির ও জুবায়ের। পরম আদরের সন্তানদের হারিয়ে শোকে মা-বাবা বাকরুদ্ধ।

শোকাহত পারুল বলেন, তিন ভাই মিলে এশার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায়। ছোট ছেলে ইয়াসিন ফরজ নামাজ পড়ে বাড়িতে এসে জানায়, মসজিদে বিকট শব্দ ও ধোঁয়া দেখেছে। আমি ওর বাবাকে ফোন করে ওদের খোঁজ নিতে বলি। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে খবর পাই, মসজিদে বিস্ফোরণে অনেকে দগ্ধ হয়েছেন। আমার দুই ছেলেকেও ঢাকায় নিয়ে গেছে। বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

তিনি বলেন, সাব্বির নারায়ণগঞ্জ কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষ ও তার ছোট জোবায়ের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। দুই ছেলেই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। তারা নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়ত। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের কর্মচারী স্বামী নুরুউদ্দিন মুন্সীর সামান্য উপার্জনে সংসারের খরচ মেটাতেই কষ্ট হতো। তাই পারুল মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরআন পড়া শিখিয়ে দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন।

নুরুউদ্দিন-পারুল দম্পতি বলেন, তাদের কষ্ট দেখে দুই ছেলে প্রায়ই বলতেন, তারা বড় হয়ে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে তাদের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেবে, সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না।

আহাজারি করতে করতে তাদের নুরুউদ্দিন বলেন, ‘চোখের সামনে আমার ছেলে দুটি পুড়ে মারা গেল। আগুনে পুড়ে কষ্ট পেয়ে আমার বাবা দুজন মারা গেছেন। আমরা ইচ্ছা ছিল যত কষ্টই হোক আমার ছেলে দুটিকে মানুষ করব, ওদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। আমি চাই না আমার মতো অন্য কোন বাবা-মায়ের কোল খালি হোক।

এই ঘটনায় অবহেলার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।

প্রতিবেশীরা জানান, সাব্বির ও জোবায়ের দুই ভাই খুবই ভালো ছিল। অনেক কষ্ট করে তাদের বাবা-মা মানুষ করছিলেন। প্রেস ক্লাবের চাকরির সঙ্গে রিকশা চালিয়ে ও দিনমজুরিও করেছেন নুরুউদ্দিন।

নারায়ণগঞ্জ বিস্ফোরণে নিহতদের স্বজনদের আহাজারি

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, নুরুউদ্দিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে চেয়েছেন সন্তানকে মানুষ করতে। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় বিস্ফোরণের সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২৭ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে ২৬ জনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১০ জন চিকিৎসাধীন। ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, যারা চিকিৎসাধীন, তাদের অবস্থাও খুব ভালো নয়। কেউ শঙ্কামুক্ত নয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত