আর্তচিৎকারে প্রকম্পিত বার্ন ইউনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:১৩ আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:২১
নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা এলাকার মসজিদে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর দগ্ধদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের সেখানে চিকিৎসা চলছে। হৃদয় বিদারক এই ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের আর্তচিৎকার আর হতাহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট।
শুক্রবার রাতের ওই ঘটনায় এখনো দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৫ জন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।
শনিবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে ভিড় করছিলেন দগ্ধদের স্বজনরা। স্বজন হারানোর খবরে তাদের কেউ চিৎকার করে কাঁদছিলেন। কেউ আবার নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিলেন। আর ভেতরে বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন দগ্ধরা। তাদের চিৎকার আর কান্নায় ওই এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
দগ্ধদের এক স্বজন জানায়, মসজিদে এশার নামাজ পড়তে গিয়ে তার দুই জামাতা ইমাম হোসেন ও আমজাদ হোসেন দগ্ধ হয়েছেন। তারা পোশাক কারখানায় কাজ করেন। নারায়ণগঞ্জের খানপুর সরদারপাড়া এলাকায় তাদের বাসা।
আরেকজন জানান, তার ভাই ভ্যানচালক মিজানুর রহমানকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে শুনে ছুটে এসেছেন। তিনি আরো জানান, বিস্ফোরণে দগ্ধদের চেহারা দেখে কাউকে চেনা যাচ্ছে না। পুরো শরীরের চামড়া পুড়ে গেছে। বের হয়ে গেছে লাল মাংস। স্বাভাবিক যে চেহারাটি আগে ছিল পুড়ে যাওয়ার পর পুরোই পরিবর্তন হয়েছে।
এদিকে আজ সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। আমাদের কাছে মোট ৩৭ জন রোগী এসেছিল। বাকি যারা ভর্তি আছেন, তাদের অবস্থাও শঙ্কামুক্ত নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোনে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। হতাহতের ঘটনায় সর্বদা খোঁজ-খবর রাখছেন। তিনি আমাদেরকে দগ্ধদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করতে বলছেন। সবারই সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা চলছে।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা প্রায় ৫০ জনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তারা। তাদের মধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- রিফাত (১৮), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুবায়ের (১৮), সাব্বির (২১), কুদ্দুস ব্যাপরী (৭২), হুমায়ুন কবির (৭০), ইব্রাহিম (৪৩), মোয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), জুয়েল (৭) ও রাসেল (৩৪)।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদের এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা প্রায় ৪০ জন আহত হন।
প্রাথমিকভাবে মসজিদের ছয়টি এসি একযোগে বিস্ফোরিত হয় বলে জানা গেছে। মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনের লিক থেকে এ বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।
বিস্ফোরণের পর হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার সময় অনেককেই বস্ত্রহীন এবং শরীর ঝলছে যাওয়া অবস্থায় দেখা গেছে। অনেককেই কান্নাকাটি করতে করতে বের হতে দেখা যায়। মসজিদের ফ্লোর রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়।
তাদের মধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস/ওয়াইএ