ঢাকা, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইলেকটোরাল পদ্ধতি ও মার্কিন নির্বাচন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১১:০৬  
আপডেট :
 ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১২:১০

ইলেকটোরাল পদ্ধতি ও মার্কিন নির্বাচন

গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নাগরিকদের প্রত্যেক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ জটিল।

মার্কিন নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। মূলত ইলেকটোরাল কলেজের ইলেকটোরদের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি স্টেটের জনসংখ্যার অনুপাতে ইলেকটোরাল কলেজের ইলেকটোরদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়।

একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার জন্য জাতীয়ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের ভোটে জয়ী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ভোটাররা ভোট দিয়ে যাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ক্ষমতা দেন মূলত তারাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। তাদের বলা হয় ইলেকটরস। ইলেকটোরাল কলেজের হিসাবটাও আবার বেশ জটিল।

মার্কিন কংগ্রেসের দুটি কক্ষ। একটি নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদ। অপরটি উচ্চকক্ষ বা সিনেট। প্রতি রাজ্যে দুজন করে সিনেটর থাকেন। জনসংখ্যার অনুপাতে থাকে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। এই প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য এবং সিনেটরের সংখ্যা অনুযায়ী কোন রাজ্যে কতটি ইলেকটোরাল কলেজ হবে তা নির্ধারণ করা হয়।

মোট ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা ৫৩৮টি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজের জয়ের প্রয়োজন হয়। আজ মঙ্গলবার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে ৫৩৮ জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়ার যোগ্য হবেন তারা আগামী জানুয়ারিতে বসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।

তবে এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় একজনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোনো রাজ্যে একজন প্রার্থী বেশি ভোট পেলে তিনি ওই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল কলেজে জয়ী হবেন। ধরা যাক, কোনো রাজ্যে ‘ক’ নামক প্রার্থী ‘খ’ এর চেয়ে এক ভোট বেশি পেলেও ওই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল কলেজে ‘ক’ জয়ী।

ব্যতিক্রমও রয়েছে মেইন ও নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যে গোটা রাজ্যের ভোটে দুজন ইলেকটর নির্বাচিত করা হয় এবং একজন করে হয় প্রতিটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে। উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালে মেইন দুই ভাগে ভাগ হয়েছিল। হিলারি দুই ইলেকটরস ও ডিস্ট্রিক্টে জয় পায় অপরটি জেতে ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোটে হেরে গিয়েও ছোট ছোট রাজ্যে জয় বা বড় রাজ্যগুলোতে সামান্য ব্যবধানে জয় পাওয়ার মধ্য দিয়েও একজন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। যেমন গত নির্বাচনেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ২৮ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু ট্রাম্প পান ৩০৪টি ইলেকটোরাল কলেজ। হিলারি ২২৭।

উদাহারণস্বরূপ, ওহাইও স্টেটের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ১২ লাখ। এই এক কোটি ১২ লাখের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট হচ্ছে ১৬টি। অর্থাৎ ইলেকটোরের সংখ্যাও ১৬ জন। ৫০টি রাজ্যে মোট ইলেকটোরাল ভোট হচ্ছে ৫৩৮টি, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে প্রয়োজন ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট।

যে অঙ্গরাজ্য যত বেশি জনবহুল, সেই রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা তত বেশি। ক্যালিফোর্নিয়ায় ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৬৩, এরপর টেক্সাস ৩৬।

ওয়াশিংটন ডিসিতে আছে মাত্র তিনটি ভোট। কোনো একটা স্টেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাররা যদি ট্রাম্পকে ভোট দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে ওই স্টেটের সব ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ট্রাম্পের। এই হিসাবে যে প্রার্থীর ভাগ্যে ২৭০টি ভোট পড়ছে সে প্রার্থী পরবর্তী মেয়াদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন প্রার্থীরা সারাদেশে ভোটারদের কাছ থেকে যেসব ভোট পান সেগুলোকে বলা হয় পপুলার ভোট এবং ইলেকটোরাল কলেজের ভোটকে বলা হয় ইলেকটোরাল ভোট। গত পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে দুটোতেই কম পপুলার ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

যে কারণে এই পদ্ধতি বেছে নেওয়া হলো, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন দেশটির বিশাল আকার ও বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ কঠিন হওয়ার কারণে জাতীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব ছিলো।

তখনও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয় ঠিক মতো গড়ে ওঠেনি, অঙ্গরাজ্যগুলোও তাদের নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে ছিলো অনেক বেশি সোচ্চার, রাজনৈতিক দলগুলোকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো এবং পপুলার ভোটকে মানুষ ভয় পেতো।

সংবিধান প্রনেতারা ১৭৮৭ সালে সংবিধান রচনার সময় কংগ্রেস এবং জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটো ধারণাই বাতিল করে দেন।

তাদের যুক্তি ছিল পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে লোকেরা তাদের স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং তার ফলে বড় রাজ্যগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।

ছোট ছোট রাজ্যগুলো এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করে কারণ এর ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এই পদ্ধতির পক্ষ নেয় কারণ সেসময় এসব রাজ্যে দাসের সংখ্যা ছিলো অনেক। দাসদের ভোটাধিকার না থাকা সত্ত্বেও আদম শুমারিতে তাদের গণনা করা হতো। এছাড়াও সংবিধান রচয়িতারা চাননি যে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে শুধু আইন প্রণেতারা দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুক।

আরো পড়ুন: এবার ট্রাম্পের উপর চটলেন চিকিৎসকরা

আরো পড়ুন: হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে ট্রাম্প

আরো পড়ুন: হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে ট্রাম্প

আরো পড়ুন: ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ও ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত

আরো পড়ুন: ট্রাম্পের কিছু হলে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকবে কে?

আরো পড়ুন: বয়স-ওজনে বড় ঝুঁকিতে ট্রাম্প

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত